Wednesday, December 31, 2014

নদ আর নদী এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কী?

জানি, নারী-পুরুষের কথা বলবেন, কিভাবে নারি, কিভাবে পুরুষ?
এই প্রশ্ন করা হলে বেশিরভাগ লোকই হাস্যকর সব ভুল উত্তর দেয়। উত্তরের একটা নমুনা দেখা যাক: নদ
আর নদীর মধ্যে পার্থক্য হল- ''নদীর শাখা আছে,
নদের শাখা থাকে না।'' বেশিরভাগ লোকই এই
উত্তরটা দেয়। সবাই এটা বংশানুক্রমে পায়
(আমি নিজেও স্কুলে আমার শিক্ষকের কাছে এই
উত্তরটাই পেয়েছিলাম) এই উত্তরের ব্যাকরণগত
ভিত্তি কেউই জানে না (ভিত্তি থাকলে তো জানবে!!!!!!)।
মজার ব্যাপার হল ইউকিপিডিয়াও একই পথের পথিক। নদ ও নদী সম্পর্কে ইউকিপিডিয়াতে লেখা আছে:
''যে জলস্রোত কোন পর্বত, হ্রদ, প্রস্রবণ
ইত্যাদি জলাধার হতে উৎপন্ন ও বিভিন্ন জনপদের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোন জলাশয়ে পতিত হয়, তাকে নদী বলে। যেমন: মেঘনা, যমুনা, কুশিয়ারা ইত্যাদি। যখন কোন নদী হতে কোন শাখা নদী সৃষ্টি হয় না, তখন তাকে বলা হয় নদ।
যেমন: ব্রহ্মপুত্র, কপোতাক্ষ, নীল নদ ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হল ব্রহ্মপুত্রের কি শাখা নেই? শীতলক্ষ্যা, যমুনা এইগুলো তাহলে কোন নদীর শাখা?
শীতলক্ষ্যা, যমুনা যদি ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী হয় তাহলে সংজ্ঞানুসারে, ব্রহ্মপুত্র তো নদী হওয়ার কথা, একে আমরা নদ বলি কেন? সেটা দূর করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন
অধ্যাপক। নদ ও নদীর সাথে শাখা থাকা না থাকার কোন সম্পর্ক নেই। এই দুয়ের মাঝে যা পার্থক্য আছে তা হল ব্যাকরণগত। বাংলা, হিন্দি, ফারসি ইত্যাদি ভাষার ক্ষেত্রে, পুরুষ বাচক শব্দ সাধারণত অ-কারান্ত এবং নারীবাচক শব্দ আ-কারান্ত বা, ই,ঈ-কারান্ত হয়। যেমন: রহিম (অ-কারান্ত)-রহিমা (আ-কারান্ত,নামের শেষে আ আছে), রজক (অ-কারান্ত)- রজকী (ঈ- কারান্ত,নামের শেষে ঈ আছে) তেমনি ভাবে: ফল-
ফুলি, কুমার-কুমারী, নদ-নদী ইত্যাদি। তাই
যে সকল 'নদীর' নাম পুরুষবাচক অর্থাৎ অ-
কারান্ত তারা নদ আর যে সকল 'নদীর নাম
নারীবাচক অর্থাৎ আ-কারান্ত বা ঈ-
কারান্ত তারা নদী। এই কারণে ব্রহ্মপুত্রর
শাখা নদী থাকলেও এটি নদ। একই কারণে নীল 'নদী' নয় 'নদ'। অনেকে আমাজন নদী বললেও উপরে উল্লেখিত কারণে তা হবে নদ। তাই এখন থেকে যে নদীর নাম অ-কারান্ত দেখবেন, নিশ্চিন্তে তাকে নদ বলুন। উল্লেখ্য, নদ ও নদী উভয়েরই ইংলিশ River।
অন্যভাবে বলা যায়, স্ত্রী এবং পুরুষ নাম জ্ঞাপক শব্দ, সাধারণত স্ত্রী নামে যে প্রবাহগুলো রয়েছে সেগুলোকে আমরা নদী নামে করে আসছি।
যেমন- গঙ্গা, সরস্বতী, যমুনা, পদ্মা, গৌরী,
ভাগীরথী, চিত্রা, নর্মদা, কাবেরী,
কৃষ্ণা ইত্যাদি। আবার পুরুষ নামে যেগুলোর প্রবাহ সেসবকে বলা হচ্ছে নদ। যেমন- ব্রহ্মপুত্র, নারদ, ভৈরব, কুমার, কপোতাক্ষ, মুসা খান, মির্জা মাহমুদ ইত্যাদি। আসলে এই সূত্র নিয়েও কিছুটা বিতর্ক আছে। অধিক গ্রহণযোগ্য আরেকটি সূত্র হচ্ছে, নামের
শেষে যদি আকার, একার, ওকার, ঔকার
ইত্যাদি থাকে তবে নিশ্চিতভাবে সেই
প্রবাহগুলো নদী নামে অভিহিত হবে। নামের
শেষে এগুলো না থাকলে এবং শুধু হ্রসুকার
থাকলে অবশ্যই নদ হবে। যেমনঃ আড়িয়ালখাঁ- এটি পুরুষ নাম জ্ঞাপক হলেও যেহেতু শেষে আকার রয়েছে সে জন্য এটি নদ না হয়ে নদী। কিন্তু মুসা খান। ন-এর পরে আকার একার কিছু নেই, যে কারণে এটি নদ। সিন্ধু যেহেতু হ্রসুকার রয়েছে শেষে,
যে কারণে এটি নদ। একইভাবে বালু- এটিও নদ। নীল স্ত্রী নাম জ্ঞাপক একটি প্রবাহ। যেহেতু এর শেষে আকার, একার কিছু নেই, সেই সূত্রে এটি নদ। এভাবে ঘাঘট স্ত্রী নামক জ্ঞাপক হলেও ট-এর পরে আ-কার, এ-কার নেই, যে কারণে এটিও নদ।
[Collected]
https://www.facebook.com/akla.pathik11



No comments:

Post a Comment

thank you