খাস সংক্রান্ত আলোচনা :উসূলে ফিকহশাস্ত্রে খাস একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) থেকে মাসালা উদ্ভাবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম।তাই কুরআন ও হাদীসের বহু স্থানে এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।এটি আমের বিপরীত। খাসের রয়েছে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রকারভেদ,যার বিশ্লেষণের মাধ্যমে খাস সম্পর্কে জানা যাবে।
খাসের আভিধানিক অর্থ:খাস আরবী শব্দ যা বাবে আল-খুসুস মাসদার থেকে ইসমি ফাইল এর ওয়াহিদ মুযাক্কারের সীগাহ। এর আভিধানিক অর্থ হল নির্দিষ্ট,নির্ধারিত,আমের বিপরীত,সুনির্ধারিত ও স্থিরকৃত ইত্যাদি। মুজমাল অসিয়তে গ্রন্থাকারে মতে এর অর্থ হল সাধারণের
পারিভষিক সংজ্ঞা :
আল মানার গ্রন্থ প্রণেতা আল্লামা নাসাফী বলেন, খাস এমন শব্দ যাকে এককভাবে একটি নির্দিষ্ট অর্থ বোঝানোর জন্য গঠন করা হয়েছে।
উসূলুশ শশী গ্রন্থাগার বলেন,খাস এমন একটি শব্দ যাকে এককভাবে নির্দিষ্ট অর্থ নামের জন্য গঠন করা হয়েছে।
কারও কারও মতে এটি একটি অর্থবোধক শব্দ যা ব্যাপকতার পরিবর্তে নির্দিষ্ট ব্যক্তি,বস্তু ও বিষয়াবলীকে বুঝাবে।
উসূলে বাযদাবী প্রণেতার মতে,প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট শব্দ যা একক অর্থের জন্য গঠন করা হয়েছে।
ইলমে উসূলে ফিকহে গ্রন্থে বলা হয়েছে, এমন শব্দ যা একক সত্ত্বা বুঝানোর জন্য গঠন করা হয়েছে।
আল্লামা মুহিবুল্লাহ বিহারূ বলেন,খাস হল প্রত্যেক ঐ শব্দ যা পরিচিত শব্দের দালালাত করে।
মোটকথাএটি এমন একটি একক অর্থবোধক শব্দ, যা ব্যাপকতার পরিবর্তে নির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তি,বস্তু ও বিষয়াবলীকে শামিল করে।
উদাহরণ:মুহাম্মদ এর দ্বারা কেবলমাত্র এক ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
ইনসান বা মানুষ এর দ্বারা কেবলমাত্র মানুষ জাতিকে নির্দিষ্টভাবে বুঝায় হয়।
ইমরাআতু বা নারী দ্বার কেবলমাত্র নির্দিষ্টভাবে নারী জাতিকে বুঝানো হয়।
প্রকারভেদ: আল মানার গ্রন্থাগারের মতে খাস তিন প্রকারের হয়ে থাকে যা হলঃ
১.খাসাসুল জিনস তথা নির্দিষ্ট জাতিবাচক
২. খাসাসুন নাউ তথা নির্দিষ্ট শ্রেণীবাচক
৩. খাসাসুল আইন বা খাসাসুল ফারদ তথা ব্যক্তিবাচক
এই সকল খাসের প্রকারসমূহের বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলঃ
১. খাসাসুল জিনস তথা নির্দিষ্ট জাতিবাচক : যে শব্দ দ্বারা নির্দিষ্ট জাতিকে বোঝায় তাকে খাসাসুল জিনস বলা হয়। অর্থাৎ, অর্থের দিক দিয়ে নির্দিষ্ট জাতি হবে কিন্তু বিষয়বস্তু শ্রেণীগতভাবে অনির্দিষ্ট হবে। যেমনঃ খালিকুল ইনসান এর দ্বারা এখানে ইনসান একটি নির্দিষ্ট জাতি হলেও নারী ও পুরুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন।
২. খাসাসুন না’উ তথা নির্দিষ্ট শ্রেণীবাচক :যে শব্দের দ্বারা একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীকে বোঝায় তাকে খাসাসুন না’উ বলা হয়। অর্থাৎ অর্থের দিক দিয়ে নির্দিষ্ট জাতি হবে এর বিষয়বস্তু ভিন্ন হলেও এর উদ্দেশ্য এক হবে।যেমন রজলুন দ্বারা মহিলা থেকে পুরুষ খাস হয়েছে।আবার ইমরতুন দ্বারা পুরুষ দ্বারা মহিলাকে আলাদা করা হয়েছে।
৩. খাসাসুল আইন বা খাসাসুল ফারদ তথা ব্যক্তিবাচক :যে শব্দের দ্বারা নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়, তাকে ব্যক্তিবাচক খাস বলা হয়। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে, ওয়া ইজকালা ইব্রাহীমা এর দ্বারা ইব্রাহীম(আঃ) এর নামকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।খাস সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত: আল-কুরআনে খাস সম্পর্কিত যেইসকল আয়াত রয়েছে তার একটি হলঃ
তারা যেন তিন কুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করে। [বাকারাঃ২৩৪]
এখানে ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) বলেন, “এখানে কুরু হল অপবিত্রতা।কারণ অপবিত্রতা হল হল সুনির্দিষ্ট।
খাসের হুকুম : খাসের হুকুম দুই ধরনের।যা হলঃ
১. খাস তার নির্দিষ্ট বস্তু দ্বারা অকাট্যভাবে অন্তর্ভূক্ত করবে।খাসের তাৎপর্য এমন যে, উক্ত খাসের আপন উদ্দীষ্ট এবং নির্দিষ্ট বস্তুটিকে এমন অকাট্যভাবে অন্তর্ভূক্ত করে তাতে উদ্দিষ্ট বস্তুটি ব্যতীত অন্য কোন কিছুর সম্ভাবনা দূর করে দেয়।যদি খাসের সাথে খবরে ওয়াহেদ অথবা কিয়াসের বিপরীত কিছু পাওয়া যায়, তাহলে উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে। কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে খবরে ওয়াহেদ অথবা কিয়াসকে বর্জন করে কুরআনের উপর আমন করতে হবে। কারণ খাসের দ্বারা ইলমে ইয়াকীন পয়দা হয়।
২. নিজেই সুস্পষ্ট হওয়াতে সেই ব্যাপারে আর কোন ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। অতএব এর উপর ব্যাখ্যা করে আর নতুনভাবে শরীয়াত প্রণয়ন করা যাবে না। এখানে তা খবরে ওয়াহিদ কিংবা কিয়াস দ্বারা তা রহিত করা যাবে না।যেমন কুরআনে বলা হয়েছে,
ওয়ালী ব্যতীত স্বামী গ্রহণ করতে পারবে।[বাকারা]
খবরে ওয়াহেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ঐ নারী যে ওয়ালীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল বাতিল বাতিল।
এখানে খবরে ওয়াহেদটি সম্পূর্ণরুপে কিতাবুল্লাহের বিপরীত শব্দ। তাই এখানে দুটি বিষয়ের উপর আমল করা অসম্ভব। এখানে খাসের উপর বায়িন সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু খাস যেহেতু নিজে নিজে সুস্পষ্ট,তাই এটা বায়িন এর সম্ভাবনা রাখে না,তাই আলোচ্য খবরে ওয়াহেদের উপর আমল পরিত্যাজ্য হবে।প্রখ্যাত উসূলবিদ বলেন, খাসের নির্দেশ মোতাবেক আমল করা জরুরী তাতে কোনরুপ অন্যথা ঘটানোর সুযোগ নেই।
কাজেই খাসের সাথে খবরে ওয়াহিদ এবং কিয়াসের সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে তার উপর আমল করতে হবে তা পরস্পর বিপরীতার্থক হয়। কারণ কিতাবুল্লাহ হল অকাট্য আর খবরে ওয়াহিদ ও কিয়াস অকাট্য নয়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে,
তালাকপ্রাপ্তা নারীগণ তিন কুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। [বাকারাঃ২২৮]
এখানে তিন কথাটা বলা হয়েছে যার দ্বারা কোনকিছু খাস করা হল। আর কুরু অর্থ হল পবিত্রতা ও হায়েয।যদি তা ইলমে নহবের কায়দায় পড়া হয় তাহলে তা পবিত্রতা অর্থে বুঝাবে। কিন্তু তার দ্বারা তিন কথাটির যথার্থতা রক্ষা পায় না। কারণ তখন তালাকপ্রাপ্তা নারীর তিন তুহর বা দুই তুহর ও তৃতীয় তুহরের কিছু অংশ (+২) ইদ্দত পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, যদি তা হায়য অবস্থা দ্বারা বুঝানো হয় তাহলে তিন কথাটির যথার্থতা বজায় থাকে।তাই পবিত্র হওয়ার জন্য কিয়াস শক্তিশালী হলেও তা খাস বিরোধী হওয়ার দরুন তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
উপসংহার :পরিশেষে বলা যায় যে, খাস উসূলে ফিকহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। আর যেহেতু এটা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং কোন বস্তুকে অকাট্যভাবে অন্তর্ভূক্ত করে, সেহেতু মাসাআলা নির্ণয়ে তা ওয়াজিব।
বিষয়-নাহী ভূমিকা: উসূলে ফিকহে নাহী হল খাসের অন্যতম একটি অংশ। এটি হল আমরের বিপরীত শব্দ। এর দ্বারা কোন কিছুকে না আবশ্যক করা হয়। উসূলশাস্ত্রে আমরের ন্যায় নাহীর গুরুত্ব রয়েছে। নাহীর দ্বারা আল্লাহ কর্তৃক বান্দার উপর কর্মের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। নাহীর আভিধানিক অর্থ; নাহী হল ফাতায়ার মাসদার যার অর্থ হল নিষেধ করা,দূরে রাখা, বিরত রাখা, ধমক দেওয়া, অবৈধ করা। Dictionary of Modern Arabic এ বলা হয়েছে, Ban, Prohibiton,Interdiction etc.
পারিভাষিক সংজ্ঞা,আল মানার গ্রন্থাগার আল্লামা নাসাফী(রঃ) বলেন, বক্তা নিজেকে অন্যের উপর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মনে করে কাউকে কর না বলে কোন কাজে বাধা দেওয়া হল নাহী।
আল্লামা নিযামুদ্দীন শাশী বলেন, বক্তা অন্য কাউকে কর না বা করবে না বলে কোন কাজ থেকে বিরত রাখাকে নাহী বলা হয়।
মুজামুল ওসীত প্রণেতা বলেন, নাহি হল না সুচক কোন শব্দ কামনা করা
কেউ কেউ বলে থাকেন যে, অধীন থেকে কোন কাজ বর্জন করার দাবী করাকে নাহী বলা হয়।
অর্থাৎ, নাহী হল এমন জিনিস কামনা করা যেটা বক্তা নিজেকে বড় মনে করে সেটাকে না করার আদেশ প্রদান করা।
নাহি দুই প্রকার-১. সত্ত্বাগত মন্দ , ২. আনুষংগিক কারণে মন্দ
১.সত্ত্বাগত মন্দ: ইহা দুই প্রকার। এক প্রকার হল বিবেক বুদ্বির দ্বারা শরীয়াতের নির্দেশ ছাড়া মন্দ মনে করা।যেমনঃমদ খাওয়া,যিনা করা,অত্যাচার করা ইত্যাদি বিবেল দ্বারা সাব্যস্ত হয় খারাপ হিসেবে। আরেকটি হল শরীয়াতের নিষেধাজ্ঞার জন্য মন্দ। যেমনঃ স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করা এটির অন্তর্ভূক্ত।যদি তা শরীয়াত দ্বারা নিষেধ না করা হত তাহলে তা সাধারণ বিবেকের দ্বারা হারাম মনে হত না।এটা শরীয়ারতের জন্য এবং বিবেকের কারণে মন্দ।সুতরাং, এটি একটি মৌলিক দোষ।
২. আনুষংগিক কারণে মন্দ: এটি আনুষংগিক বা বিশেষ কারণে নিষিদ্ব হয়েছে। এটি সত্ত্বাগতভাবে নিষিদ্ব নয়। এটি আবার দুই ভাগে বিভক্ত যার এক প্রকার হল বিবেক বুদ্বির দ্বারা শরীয়াতের নির্দেশ ছাড়া মন্দ মনে করা।যেমনঃ কুরবানীর দিন,ঈদের দিন রোযা রাখা যা মানুষের জ্ঞানে ধরা হয়।
আরেকটি হল শরীয়াতের নিষেধাজ্ঞার জন্য মন্দ। যেমনঃ জুমার আযানের সময় ক্রয়-বিক্রয় করা।এটি বৈধ কিন্তু জুমার আযানের জন্য তা বৈধ নয়। আল্লাহ বলেন, মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। [জুমআঃ৯]
হুকুম : এটার উপর নিষেধাজ্ঞার বিধান জারী হওয়ার পরে এটা মৌলিকভাবে কোন দোষের কারণ নয়।এটি অন্য একটি বস্তুর কারণে এটি দোষের হয়। এগুলো পারতপক্ষে উত্তম কাজ।যেমন রোযা রাখা,নামায,ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি।কিন্তু তা বিশেষ কারণে রহিত হয়। উদাহরণস্বরুপ, ঈদের দিন রোযা রাখা। জুমার আযানে ক্রয়-বিক্রয় করা,মাকরুহ ওয়াক্ত নামায পড়া।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আমর দ্বারা কোন কিছুকে আবশ্যক যেমন করা হয় নাহী দ্বারা কোন বস্তুকে নিষিদ্ব করা হয়। নিষিদ্ব বস্তু থেকে বেচে থাকা ঈমানের দাবী।
বিষয়- আমর: উসূলে ফিকহে আমর হল খাসের অন্যতম একটি প্রকারভেদ। এর দ্বারা বান্দার উপর শরীয়াতের পক্ষ থেকে কাজের আবশ্যকতা আরোপিত হয়।শরীয়াতের অধিকাংশ মাসালা এখান থেকে উদ্ভাবিত হয়েছে।
আভিধানিক অর্থ : আমর শব্দটি বাবে নাসারা এর মাসদার এটি একবচন যার বহুবচন হল উমুর ও আওয়ামির যার অর্থ হল আদেশ দেওয়া ও নির্দেশ দেওয়া।কুরআনে এর অর্থ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।যেমনঃ আদেশ অর্থে,কাজ অর্থে,সিদ্বান্ত অর্থে,প্রলয় দিবস অর্থে, প্রত্যাদেশ অর্থে,বিষয় অর্থে, অবস্থা অর্থে, জীবনব্যবস্থা অর্থে,অনুসন্ধান অর্থে ইত্যাদি।
পারিভাষিক সংজ্ঞা,
আল মানার প্রণেতা আল্লামা নাসাফী(রঃ) বলেন, বক্তা নিজেকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মনে করে কাউকে কর বলে আদেশ করবে তাহলে তা আমর হবে।
এখানে কর দ্বারা আদেশ করা হয়েছে আর যদি নিজে সে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন না হয় তাহলে তা প্রার্থনা হবে।
আল্লামা নিযামুদ্দীন শাশী(রঃ) বলেন, অন্যের উপর কোন কাজ অত্যাবশ্যকভাবে করে দেওয়ার ক্ষমতা প্রয়োগ করাকে আমর বলা হয়।
সাইয়েদ আহমদ হাশেমী বলেন,বক্তা নিজেকে সম্বোধিত ব্যক্তি থেকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মনে করে তার থেকে কোন কাজ সমাধা হওয়ার কামনা হল আমর।
দুরসুল বালগাত প্রণেতা বলেন, আদেশদাতা নিজেকে সম্বোধিত ব্যক্তি থেকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মনে করে তার দ্বারা কোন কাজ সম্পাদনের কামনা করাকে আমর বলা হয়।
আমিমুল ইহসান বলেন, আমর হল আবশ্যক কোন শব্দ দ্বারা কাজ চাওয়া।
অর্থাৎ, নিজেকে বড় মনে করে অন্যকে কোন কিছু আদেশ দিয়ে কোন কাজ সম্পাদনের কামনার নাম হল আমর।
আমরের দ্বারা সঙ্ঘটিত কাজ মুসলিমগণের জন্য ওয়াজিব কিনা?
আমাদের মহানবী(সাঃ) যেইসকল কথা তার নিজের মুখ দিয়ে বের বলেছেন তার উপর আমর ওয়াজিব হবে।তদ্রুপ ফিলীর দ্বারা আমল করা ওয়াজিব হবে। আমাদের মুহাম্মদ(সাঃ) এর যেসকল কাজ স্বাভাবজনিত কারণে ও বৈষয়িক ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনাগত ত্রুটির জন্য যেসকল কাজ প্রকাশিত হয়েছে অথবা যা কেবল মহানবী(সাঃ) এর জন্য নির্দিষ্ট এই তিন ধরনের কাজ উম্মতের জন্য ওয়াজিব নয় এই ব্যাপারে ইমামগণ একমত হলেও অন্যান্য কাজের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। এই সকল বিষয়াবলী দলীলসহ নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১. ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) এর মতামত, ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) এর মতে নবী করিম(সাঃ) যা অনবরত করে গেছেন তা উম্মতের জন্য ওয়াজিব নয়।যদি তিনি কোন কিছু নিষেধ না করে থাকেন তাহলে তা ওয়াজিব হবে না। কেননা তার আমল দ্বারা প্রমাণিত হয় এতে আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে।
দলীল: ক। রাসূলে করীম (সাঃ) যখন সাওমে বিসাল পালন করতেন তখন তার দেখাদেখি সাহাবাগণ করতে চাইলে রাসূল তা করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি তখন বলেন, রাতদিন পানাহার ছাড়া একাধারে রোযা রাখার শক্তি তোমাদের নেই। আমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আধ্যাত্মিক শক্তি দেওয়া হয়েছে।
খ।একদা জুতা পরিহিত অবস্থায় রাসূলে করীম(সাঃ) নামাযের ইমামতি করছিলেন।এমতাবস্থায় জিবরাঈল(আঃ) রাসূলকে বললেন যে তার জুতা নাপাক হয়ে গেছে।তখন রাসূল তার জুতা খুললে তার সাহাবাগণ তার দেখাদেখি জুতা খুললে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) নামায শেষে তার সাহাবাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,
কিসে তোমাদেরকে জুতা খুলতে উদ্বুদ্ব করল তারা বলল, আমরা আপনার জুতা খুলতে দেখে উদ্বুদ্ব হয়েছি।
উপরোক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাজ উম্মতের জন্য ওয়াজিব নয়।
শাফিঈদের মতামত: এই মাযহাবের অনুসারীদের মতে, মুহাম্মদ(সাঃ) এর সকল কাজের দ্বারা আমর ওয়াজিব হবে। তারা এইক্ষেত্রে দুটি দলীল পেশ করে থাকে যা হলঃ ১. রাসূলুল্লাহ(সাঃ) খন্দকের যুদ্বের দিন বলেছিলেন, তোমরা ঠিক সেভাবে নামায আদায় কর যেভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখ।
২.আমর দ্বারা কথা বুঝানো হয় ।যেমনঃ “যখন তাদের মধ্যে কোন কাজ নিয়ে পরস্পর ঝগড়া হয়।
আমর দ্বারা কাজ বুঝানো হয়। যেমনঃ “ফিরআউনের কোন কাজ সঠিক ছিল না
হানাফীদের পক্ষ থেকে এর উত্তর
১. হানাফীগণ বলে থাকেন যে, এই ধরনের কথার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না যে, মুহাম্মদ(সাঃ) এর সকল কাজের দ্বারা আমর ওয়াজিব হিসেবে সাব্যস্ত হবে। এখানে যেই হাদীসটি বলা হয়েছে তা তার কথা অর্থাৎ, তোমরা ঠিক সেভাবে নামায পড়বে এর দ্বারা তা খাস হয়েছে।
২. উল্লেখ্য এখানে “ফিরআউনের কোন কাজ ছিল না”? এ আয়াতাংশে আমর দ্বারা ফিলী উদ্দেশ্য করা মাজাজ হিসেবে হয়েছে।কেননা আমর হল সাবাব আর ফিলী হল মুসাব্বাব আর আমাদের আলোচ্য বিষয় হল হল হাকীকাহ।তাই এই যুক্তিটি সঙ্গত নয়।
মালিকীদের মতামত
আমরের ব্যাপারে মালিকীগণ এই অভিমত ব্যক্ত করে থাকেন যে, আমরের দ্বারা কেবল মাত্র একটি কাজের বৈধতা প্রকাশ পায়।আল্লাহ বলেন,
তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। [হাজ্জঃ৭৮]
মুতাযিলাদের মতামত, মুতাযিলাগণ এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে যে, আমরের দ্বারা এটি প্রমাণিত হয় যে কাজটি করা যায়।
আমরের পুনরাবৃত্তি
আমর এর হুকুম দ্বারা তা পুনরাবৃত্তি হবে কিনা তা নিয়ে কতিপয় আলেমদের ভিতর মতপার্থক্য রয়েছে।
হানাফীদের মতামত, হানাফীদের মতে আমরের হুকুম দ্বারা তা পুনরাবৃত্তি হয় না। তাদের দলীল নিম্নরুপঃ
ক। আমর শব্দটি যেহেতু ফিয়েল মাসদার এর সংক্ষিপ্ত রুপ। তাই মাসদারকে বারবার করার সম্ভাবনা রাখে। যেমনঃআরবীতে আমরের সীগা ইদ্রীব শব্দের অর্থ হল আমি তোমার থেকে প্রহার কামনা করছি।এমনভাবে সাল্লু অর্থ আমি তোমার থেকে নামায কামনা করছি। যতবার কামনা করা হবে তাই হবে।তা আমরের জন্য নয় তা কামনার জন্য হবে।
খ।অনুরুপভাবে তোল্লাকী অর্থ তুমি তালাকের কাজটি সম্পন্ন কর। সেতো ইদ্রীব সাল্লু তোয়াল্লাকী যথাক্রমে আদ-দারবু,আস-সোলাতু ও আত তোয়লাকু মাসদারের সংক্ষিপ্ত রুপ।কিন্তু মাসদা আমর যে মাসদার থেকে সংক্ষিওপ্পত করা হয়েছে, তা একটি সংখ্যার সম্ভাবনা রাখে না।আর আমর তার আকাল্লুল জিনসের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। আর তা হল একক। আর একক তো কোন সংখ্যার সম্ভাবনা রাখে না। তাই বুঝা গেল যে, আমর তাকরার কামনা করে না ও সম্ভাবনা রাখে না।এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ,যেইসব ইবাদত বারবার করা হয় যেমন নামায,রোযা,যাকাত ইত্যাদি এগুলো আমরের কারণে করা হয় না। বরং, আসবাবের কারণে করা হয়।তা আসে বলে করতে হয়।
ইসহাকের মতামত, আমর পুনারবৃত্তি কামনা করে।
দলীল: তিনি প্রমাণ হিসেবে বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, হে লোকসকল তোমাদের উপর আল্লাহ তায়ালা হাজ্জ ফরয করেছেন”। তখন আকরা ইবন হাবিস(রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল এটা কি এই বছরের জন্য নাকি সব সময়এর জন্য?
আকরা (রাঃ) আরবী ভাষা-ভাষী হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর বাণী থেকে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর বাণী থেকে পুনরাবৃত্তি বুঝিয়েছেন।সুতরাং, বুঝা গেল আমর পুনরাবৃত্তি কামনা করে।
শাফিঈ এর অভিমত, ইমাম শাফিঈ(রঃ) ও তার কিছু সংখ্যক অনুসারীদের মতে আমর তার মামুরকে বার বার সম্পাদন কামনা করে। এবং এর সম্ভাবনা রাখে।
দলীল, প্রামণ পেশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আনসুরু শব্দের অর্থ আমি তোমার থেকে সাহায্য কামনা করছি। আর সাহায্য শব্দটি হল অনির্দিষ্ট। নিয়ম আছে, অনির্দিষ্ট হা বোধকের অধীনে নির্দিষ্টের উপকারীতা দিলেও আমের সম্ভাবনা রাখে। কাজেই বিশেষ কোন ইঙ্গিত পাওয়া না গেলে আমর আম এবং পুনরাবৃত্তির অর্থে ব্যবহার করা হবে।
কতিপয় আলেমের অভিমত, শাফিঈ মতালম্বী কিছু সংখ্যক আলেমের মতে, আমরের সাথে কিছু শর্ত যুক্ত হলে সেই আমর পুনারাবৃত্তি হবে।
দলীল: আল্লাহ বলেন, যদি তোমরা অপবিত্র হও তাহলে পবিত্রতা অর্জন কর। যে চুরি করে সে পুরুষ হোক কি নারী হোক তার হস্ত কর্তন কর। তোমরা সালাত আদায় কর সূর্য ঢলে পড়ার সাথে সাথে।
প্রথম আয়াতে অপবিত্রতা এই শর্তের জন্য পবিত্রতা বারবার অর্জন করতে হবে। ২য় আয়াতে, চুরির দোষের জন্য হাত কাটতে হবে এবং শেষ আয়াতে সূর্য ঢলে পড়ার সাথে সালাতের পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
হানাফীগণের পক্ষ থেকে উত্তর, আবূ ইসহাকের হাদীসে হযুরত আকরা ইবন হাফিয বুঝে নেন যে, সময়ের পুনরাবৃত্তির সাথে সাথে ইবাদতের পুনরাবৃত্তি হয়। এটা রোযা, কিংবা নামাযের সাথে সম্পর্কিত।কিন্তু হাজ্জ্বের ব্যাপারে তিনি জানতেন যে, এটা সময়ের সাথে সম্পর্কিত আর সেটা বারবার আসে। কিন্তু বায়তুল্লাহ শরীফ একটি শর্ত আর সেটা বার বার আসে না।এসব কারণে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন আমরা তাকরার করে ভেবে নয়।
শাফিঈগণের দলীলের উত্তর, শাফিফিঈগণ যে যুক্তি দেখায় যে, আমর দ্বারা যা সাধারণ বিষয় আর সাধারণের সাথে সম্পর্কিত হল আমরে মুকায়িদ যা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আমাদের আলোচ্য বিষয় আমরে মাতলাক। অতএব শাফিঈদের দলীল গ্রহণযোগ্য নয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আমর খাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।এর বিধান ওয়াজিব হলেও মুহাম্মদ(সাঃ) এর সকল কাজ ওয়াজিব নয়।কারণ কিছু কিছু কাজ কেবলমাত্র মুহাম্মদ(সাঃ) এর জন্য খাস ছিল আর আমরের হুকুম দ্বারা পুনরাবৃত্তির হুকুম বহন করে না।
আম :আমের আভিধানিক অর্থ হল ব্যাপক, সাধারণ, বহু সংখ্যক জিনিসের অন্তর্ভূক্তকারী, খাসের বিপরীত শব্দ,জামাত অন্তর্ভূক্তকারী ইত্যাদি।
কিতাবুল মানারে বলা হয়েছে, আম হল এমন শব্দকে যা অর্থগতভাবে অন্তর্ভূক্ত রাখার ভিত্তিতে নিজের আওতায় এমন বহু একককে শামিল করে যেগুলো হাকীকতের দিক থেকে অভিন্ন।
আল্লামা নিযামুদ্দীন শাশী(রঃ) বলেন,আম এমন শব্দকে বুঝায় যা শব্দ বা অর্থের দ্বারা বহু সংখ্যক ব্যক্তি বা বস্তুকে বুঝায়। শব্দের দিক দিয়ে বহু সংখ্যক যেমন মুসলিমগণ,মুশরিকতা ইত্যাদি বুঝায় আর অর্থের দিক দিয়ে বহু সংখ্যক যেমন যারা, যেগুলো বুঝায়।
আল্লামা বাযদুভী বলেন, আম এমন প্রত্যেক শব্দ যা শব্দগতভাবে বা অর্থগতভাবে অনেকগুলো নামকে একত্রিত করে।
আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, বহু সংখ্যক সমষ্টি উসূলের পরিভাষায় আম।
আল্লামা জাসসাস বলেন, আম এমন শব্দ যা ব্যাপকভাবে সবকিছু অন্তর্ভূক্ত করে।
আমের হুকুম: আমের হুকুম হল এই যে, যেই আম থেকে বিশেষ কোন অংশ খাস হয় নাই সেটি হুকুমের দিক থেকে খাস এর অনুরুপ। অর্থাৎ, আম নিজের আওতায় যে সব একককে অন্তর্ভূক্ত করে সেগুলোর ভিতর প্রয়োগকে অকাট্যভাবে ওয়াজিব করে। কাজেই যেভাবে খাসের উপর আমল করতে হবে সেভাবে আমের উপর আমল করতে হবে। আমের ভিতর যদি বিপরীত খবরে ওয়াহিদ বা কিয়াস থাকে তাহলে উভয়ে ভিতর সমন্বয় সাধন করে তার উপর আমল করতে হবে।
হানাফীগণ বলে থাকেন যে, যদি এদের ভিতর সমন্বয় সাধন করা না যায় তাহলে সেখানে আর আমের উপর আমল অব্যাহত রাখতে হবে। সেখানে খবরে ওয়াহিদ বা কিয়াস পরিত্যজ্য হবে। কারণ আমের দ্বারা হুকুম অকাট্য হয়। খবরে মুতাওয়াতির থেকে জানা যায় যে, সাহাবাগণ প্রায় সময় আমের উপর আমল করতেন। এরজন্য কোন উপলক্ষ্য,ইশারা,ইঙ্গিতের প্রয়োজন হয় নাই।
এখানে শাফিঈগণ বলে থাকেন যে, যে আম খাসের ভিতর অন্তর্ভূক্ত করা হয় নাই, তা খবরে ওয়াহিদ বা কিয়াসের অন্তর্ভূক্ত।তাদের মতে এ আমের উপর আমল করা অকাট্যভাবে ওয়াজিব নয়। তা সন্দেহমূলক ওয়াজিব।কিন্তু তাদের কাছে কোন যথার্থ দলীল না থাকার দরুন অনেকে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে যে, কুরআনের যতটুকু পড়া তোমাদের জন্য সহজ ততটুকু তোমরা পড়বে। [মুযাম্মিলঃ২০]
অন্যদিকে খবরে ওয়াহিদে বলা হয়েছে, সুরা ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না।
এখন প্রথমটি হল কুরআনে আয়াত আর ২য়টি হল খবরে ওয়াহিদ। দুটি পরস্পর বিপরীত ধর্মী বিধান হওয়ায়ে হানাফীগণ এখানে এই সমাধান করেছেন যে, নামাযের ভিতর মুতাল্লাক কিরাআত করা ফরয।তা না হলে সালাত বাতিল বলে গণ্য হবে। অন্যদিকে খবরে ওয়াহিদের দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, সুরা ফাতিহা পাঠ করা নামাযের ভিতর ওয়াজিব। তা না পাঠ না করা হলে ওয়াজিব তরক করার গুনাহ হবে।
তারপর কুরআনে বলা হয়েছে, যে চুরি করে পুরুষ হোক কি নারী হোক তার হাত কর্তন কর এটা তাদের কৃতকর্মের ফল।এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আদর্শ দণ্ড। [মায়িদাঃ৩৮]
এখানে এটি একটি আম হুকুম। এখন চুরির বিরুদ্বে একটি কিয়াস পাওয়াতে তা প্রত্যাখ্যাত হবে। উল্লেখ্য যে, চুরির শাস্তি হল চোরের হাত কাঁটতে হবে এবং চুরি করা জিনিস তাকে ফেরত দিতে হবে। এখন যদি চুরি করা জিনিস নষ্ট হয়ে যায় সেই ব্যাপারে হানাফী উসূলবিদ্গণ বলেন, চোর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে চুরি করে তাহলে তার জরিমানা দিতে হবে অন্যথায় নয়।
আবার কোন কোন উসূলবিদ বলেন, চোর ইচ্ছাকৃতভাবে হোক কি অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক তাকে জরিমানা দিতে হবে।
তারা এটি কে ছিনতায়ীকৃত মালের উপর ধার্য্য করে থাকে।কিন্তু এই কিয়াসটি আল্লাহর কথাআল্লাহর পক্ষ থেকে আদর্শ দণ্ড এর বিপরীতার্থক হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এখানে আল্লাহর শাস্তিকে বর্ধিত করা হয়েছে।তাই তা পরিত্যাজ্য হবে।
শাফিঈ(রঃ) এর অনুসারীগণ, আশাআরী এবং জুমহুর উলামাদের মতে আম দ্বারা অকাট্য কোন কিছু বুঝায় না বরং এর দ্বারা ধারনামূলক জ্ঞান অর্জিত হয়।অন্যদিকে হুমাম ও মানার প্রণেতার মতে এর দ্বারা অকাট্য ইলম প্রতিষ্ঠিত হয়। https://www.facebook.com/akla.pathik11
আমের প্রকারভেদ: আম প্রধান্ত দুই প্রকার যার একটি হল বিশেষ কোন অংশে খাস করা হয়েছে এমন আম এবং অপরটি হল যার কোন অংশ খাস করা হয় নাই। এক প্রকারের আমে বিশেষ অংশকে খাস করা হয়েছে, তার উপর আমল করা ওয়াজিব। এ পর্যায়ে আম হুকুমের সাথে দলীলে খুসূস সংযুক্ত হওয়ায় আমের অকট্যতা আর থাকে না বরং তা যান্নী হয়ে যায়। তবে তা আমল করা খবরে ওয়াহিদ বা কিয়াসের মত ওয়াজিব। তেমনিভাবে দলীলে খুসূসের সাথে আম সংযুক্ত হওয়াতে তা যন্নীতে পরিণত হবে এবং তার উপর আমল করা ওয়াজিব হবে। যেমনঃ আল্লাহ বলেন,
আমের প্রকারভেদ: আম প্রধান্ত দুই প্রকার যার একটি হল বিশেষ কোন অংশে খাস করা হয়েছে এমন আম এবং অপরটি হল যার কোন অংশ খাস করা হয় নাই। এক প্রকারের আমে বিশেষ অংশকে খাস করা হয়েছে, তার উপর আমল করা ওয়াজিব। এ পর্যায়ে আম হুকুমের সাথে দলীলে খুসূস সংযুক্ত হওয়ায় আমের অকট্যতা আর থাকে না বরং তা যান্নী হয়ে যায়। তবে তা আমল করা খবরে ওয়াহিদ বা কিয়াসের মত ওয়াজিব। তেমনিভাবে দলীলে খুসূসের সাথে আম সংযুক্ত হওয়াতে তা যন্নীতে পরিণত হবে এবং তার উপর আমল করা ওয়াজিব হবে। যেমনঃ আল্লাহ বলেন,
আল্লাহর তোমাদের জন্য ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।[বাকারাঃ২৭৫]
এখানে ব্যবসার সাথে সুদকে কেবল বৃদ্বি করা হয়েছে। সকল ধরনের বৃদ্বি হারাম নয়।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর এক হাদীসের দ্বারা তা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ক্রয়-বিক্রয় গমের পরিবর্তে গম, যবের পরিবর্তে যব,খেঝুরের পরিবর্তে খেজুর......... উভয় ক্ষেত্রে সমান হতে হবে বিনিময়ে আর তাতে অতিরিক্ত হলে তা সুদ বলে গণ্য হবে।
যেই রিবা ব্যবসার ভিতর হয়ে থাকে তাই এর সাথে সংক্লিষ্ট। তা তিন স্তর পর্যন্ত করা যাবে।তার বেশী হলে তা নির্দিষ্ট করা যাবে না।
আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন, যেখানে মুশরিক পাও সেখানে হত্যা কর। তবে মুশরিকদের কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাকে আশ্রয় দিবে। [তওবাঃ৫-৬]
প্রথম আয়াতটি আম আর পরেরটি খাস। এখানে পরের অংশ দ্বারা বৃদ্ব,নারী ও শিশু মুশরিকদের বুঝানো হয়েছে বলে কতিপয় আলেম এই মতামত ব্যক্ত করেছেন। আর তারা কোন মুসলিমকে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্র করে না।তাই পরের আয়াত দ্বারা পূর্বের আয়াতকে সুনির্দিষ্ট তথা তাখসীস করেছে।
যেই প্রকারের আম দ্বারা কোন কিছু খাস করা হয় নাই, সেই ধরনের আমের ব্যাপারে হুকুম হল সেই ধরনের আমের দ্বারা খাস মানসূখ করা যাবে। কিন্তু তার জন্য শর্ত হল এই যে, তা মানসূখ করার জন্য নাসিখের হুকুমটি মানসূখের সমমানের হতে হবে। যেমনঃ এক হাদীসে উরানিয়্যীন সম্পর্কে, উরায়না গোত্রীয় লোকদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, অতঃপর মহানবী(সাঃ) তাদেরকে আদেশ প্রদান করলেন যে, তারা যেন যাকাতের উটসমূহ চরানের ক্ষেত্রে গমন করে এবং উটগুলোর দুধ ও পেশাব পান করে।
উল্লেখ্য এই হাদীসটি উটের পেশাব খাওয়ার সাথে খাস এবং তা হালাল বলা হয়েছে।কিন্তু অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে যে,
তোমরা পেশাব থেকে সাবধানতা অবলম্বণ কর।কেননা তা কবরের আযাব ও ত্রুটির ফলেই হয়ে থাকে।
এই হাদীসটি আম। শেষোক্ত হাদীসটি আম হওয়া সত্ত্বেও তা খাসের সমকক্ষতা হওয়ার জন্য তা মানসূখ হয়ে গিয়েছে। মোল্লা জিউন বলেন, প্রথম হাদীসটি মুসলা সম্পর্কিত। আর এই কারণে তা মানসূখ হয়ে গেছে। https://www.facebook.com/akla.pathik11
শব্দ ও অর্থানুযায়ী আম দুই প্রকার। তা হল শব্দানুযায়ী বহুবচন এবং অর্থানুযায়ী বহুবচন।
শব্দানুযায়ী বহুবচনের ভিতর মুআমালাহ,ইসতিফালাহ এবং রিজালুন অন্তর্ভূক্ত।
অন্যদিকে অর্থ দ্বারা যাকে বহুবচন বুঝায় তার দ্বারা কাউমুন,আহলুনকে বুঝায়।
আম দ্বারা খাসের রহিত হওয়া https://www.facebook.com/akla.pathik11
শাফিঈগণ বলে থাকেন যে, খাস দ্বারা ইলমে ইয়াকীন তথা অকাট্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় যার ফলে আম দ্বারা খাস রহিত হয় না।কারণ আমের দ্বারা ধারনামূলক ইলম প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই আম খাসকে রহিত করতে পারে না।
হানাফীদের মতে, আম দ্বারা খাস রহিত হয়। কারণ এক হাদীসে উরানিয়্যীন সম্পর্কে, উরায়না গোত্রীয় লোকদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন, অতঃপর মহানবী(সাঃ) তাদেরকে আদেশ প্রদান করলেন যে, তারা যেন যাকাতের উটসমূহ চরানের ক্ষেত্রে গমন করে এবং উটগুলোর দুধ ও পেশাব পান করে।
উল্লেখ্য এই হাদীসটি উটের পেশাব খাওয়ার সাথে খাস এবং তা হালাল বলা হয়েছে।কিন্তু অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে যে,
তোমরা পেশাব থেকে সাবধানতা অবলম্বণ কর।কেননা তা কবরের আযাব ও ত্রুটির ফলেই হয়ে থাকে।
এই হাদীসটি আম। শেষোক্ত হাদীসটি আম হওয়া সত্ত্বেও তা খাসের সমকক্ষতা হওয়ার জন্য তা মানসূখ হয়ে গিয়েছে। মোল্লা জিউন বলেন, প্রথম হাদীসটি মুসলা সম্পর্কিত। আর এই কারণে তা মানসূখ হয়ে গেছে।
এখানে দেখা যাচ্ছে যে, আম দ্বারা খাস রহিত হয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার -পরিশেষে বলা যায় যে, আম খাসের ন্যায় শরীয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। তাই একে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। এর দ্বারা ইলমে ইয়াকীন প্রতিষ্ঠিত হয়।এর দ্বারা খাসের হুকুম রহিত করা যায়।
https://www.facebook.com/akla.pathi
উপসংহার -পরিশেষে বলা যায় যে, আম খাসের ন্যায় শরীয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। তাই একে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। এর দ্বারা ইলমে ইয়াকীন প্রতিষ্ঠিত হয়।এর দ্বারা খাসের হুকুম রহিত করা যায়।
https://www.facebook.com/akla.pathi
No comments:
Post a Comment
thank you