ইসলাম মহান
আল্লাহ প্রদত্ত রাসুল
(সঃ) প্রদর্শিত মানব
জাতির জন্য একমাত্র
পূর্ণাঙ্গ শান্তিপূর্ণ জীবন
বিধান। এতে মানুষের
জীবনের সকল দিক
ও বিভাগের যাবতীয়
সুন্দরতম সমাধান নিহিত
রয়েছে। ইসলামের প্রধান
উৎস পবিত্র কুরআন
ও সুন্নাহ। আর
এ কুরআন ও
সুন্নাহর মৌলিক বিধানগুলোর সমসাময়িক পরিবর্তিত
পরিস্থিতির আলোকে স্থান-কাল
পাত্রভেদে বাস্তব অবস্থার
আলোকে প্রায়োগিক রূপ
দিয়েছে যে শাস্ত্র,তার
নাম হল "ইলমুল
ফিকহ।" আল্লাহর রাসুল
(সঃ) বলেছেন-"প্রত্যেক
বস্তুর স্তম্ভ আছে,আর
এ দ্বীনের স্তম্ভ
হলো ফিকহ" এর
জ্ঞান শিক্ষা করা
ফরযে আইন ও
ফরযে কেফায়া। হিজরী ১০ সাল
পর্যন্ত ফিকহ শাস্ত্র
ছিল মহা নবী
(সঃ)-এর জীবনের
সাথে সম্পৃক্ত। এ
সময় সকল সমস্যার
সমাধান ওহীর ভিত্তিতে
তিনি নিজেই করতেন। পরবর্তীতে
সত্যপন্থি মুজতাহিদগন নিজ
প্রজ্ঞা ও বুদ্বির
সাহায্যে আন্তরিক ও
একনিষ্ঠ গবেষণার মাধ্যমে
মুসলিম মিল্লাতের জন্য
পবিত্র কুরআন ও
হাদীসের আলোকে সমস্যার
সমাধান খুজে বের
করেন। পরবর্তীতে ইমাম
আবু হানিফা (র),
ইমাম মালিক (র)
সহ অনেকেই এ
কাজে আত্ননিয়োগ করেন।
ফিকহ শাস্ত্রের শাব্দিক পরিচয়ঃ- উসূল শব্দটি আসল এর বহুবচন। ফিকহ শব্দটি আরবী এর শাব্দিক অর্থ উন্মোচন করা,স্পষ্ট করা, উপলব্ধি করা, অনুধাবন করা, জানা, বুঝা, চিন্তা, গবেষণা ইত্যাদি। যেমন কোরআনে এসেছে-"তাদের অন্তর রয়েছে, তবে তাদ্বারা তারা উপলব্ধি করেনা" ( আরাফ-১৭৯)
অতএব উসূলে ফিকাহ অর্থ আইন শাস্ত্রের ভিত্তি আইনের মূলনীতি, আইনতত্ত্ব।
অতএব উসূলে ফিকাহ অর্থ আইন শাস্ত্রের ভিত্তি আইনের মূলনীতি, আইনতত্ত্ব।
ইলমে-ফিকহ-এর
পারিভাষিক পরিচয়ঃ- ইসলাম
স্বীকৃত বিধি-বিধানের
সমষ্টি হচ্ছে ফিকহ। সহজ
ভাষায় বলা যায়
"যে বিষয় অধ্যয়ন
করলে বিস্তারিত দলিল
প্রমানের ভিত্তিতে শরিয়তের
বিধিবিধান সঠিক ও
স্পষ্টভাবে জানতে পারা
যায় তাকে ইলমুল
ফিকহ বলে।
কারো মতে,
যে শাস্ত্রের মাধ্যমে
কুরআন,সুন্নাহ,ইজমা
ও কিয়াস হতে
শাখাগত শরয়ী
বিধান সম্পর্কে অবহিত
হওয়া যায়, তাকে
ইলমে ফিকহ বলে।
আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতী
(রঃ) বলেন-
কুরআন,সুন্নাহ হতে
বিবেক-বুদ্ধি ও
বিচক্ষণতার মাধ্যমে প্রাপ্ত
জ্ঞানকে ইলমে ফিকহ
বলে।
মুহিবুল্লাহ ইবনে আবদুশ শাকুর বিহারী - যে নীতিমালার জ্ঞান ফিকাহ শাস্ত্রের আইনসমূহ দলীল প্রমাণ দ্বারা উদঘাটন করতে সাহায্য করে তাকে উসূলে ফিকাহ বলে।
আল্লামা নিযামুদ্দীন বলেন- উসূলে ফিকহ
এমন কতগুলো নীতিমালা
শিক্ষা করাকে বলে
যেগুলো দ্বারা শরীয়তের
হুকুম আহকাম পুঙ্খানু-পুঙ্খ
প্রমাণ দ্বারা উদঘাটনে
সাহায্য করে।
শায়খ ইবন
হুমাম
বলেন,--শরীয়াতের
অকাট্য
বিধি-বিধানের
যথাযথ
অনুধাবন
করাকে
শরীয়াতের
পরিভাষায়
ফিকহ
বলা
হয়।
ইমাম গাযযালী(রঃ) বলেন,--শরীয়াতের
শাখা-প্রশাখাজনিত
জ্ঞান
লাভ
করা
এবং
সূক্ষ্ণ
ইল্লত
সম্পর্কে
জ্ঞাত্
হওয়াকে
ফিকহ
বলা
হয়।
বাদরান আবুল আয়নায়ন
তাঁর
উসূলুল
ফিকাহ
গ্রন্থে
নিম্নোক্ত
সংজ্ঞা
প্রদান
করেছেন,
উসূলে
ফিকাহ
এইরূপ
কতগুলো
মূলনীতি
এবং
প্রতিপাদ্যের
সমষ্টি
যেগুলোর
সাহায্যে
বিস্তারিত
দলীল
প্রমাণের
ভিত্তিতে
শরীয়াতের
ব্যবহারিক
বিধান
নির্গত
(ইসতিম্বাত)
করা
হয়।
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী
তাঁর
ইলমী
উসূলিল
ফিকাহ
গ্রন্থে বলেন যে শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে সামগ্রিকভাবে ফিকাহ শাস্ত্রের সকল শাখা সম্পর্কে এবং তার অনুকূলে প্রদত্ত দলীল প্রমাণ, তার অবস্থা ও তা প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া যায় তাকে উসূলে ফিকাহ বলে।
আল্লামা হাসকাফী(রঃ) দুররুল
মুখতার গ্রন্থে লিখেছেন,
ফিকহের
আভিধানিক
অর্থ
হল
কোন
বস্তুর
সম্পর্কে
জ্ঞাত
হওয়া।পরে তা শরঈ বিষয়াদীর জানার সাথে খাস হয়ে যাবে।এর
বাবে
সামাআ
হলে
তার
মাসদার
হবে
জানা
আর
কারম
হলে
তার
অর্থ
হবে
ফকীহ
হবে।
আল্লাম রশিদ
রিদা
তার
প্রণীত
তাফসীর
গ্রন্থে উল্লেখ
করেছেন যে, এ
শব্দটি মোট বিশ
বার ব্যবহার করা
হয়েছে।তন্মধ্যে
উনিশবার গভীর জ্ঞান
ও সূক্ষ্ণ ইলমের
অর্থ ব্যবহৃ হয়েছে।
মিফফতাহুস সাআদা
গ্রন্থের
লেখক বলেছেন,
যে
ইলমে
শরীয়াতের
বিধি-বিধান
সম্পর্কে
আলোচনা
করা
হয়
এ
হিসেবে
তা
উদ্ভাবন
করা
হয়
বিস্তারিত
প্রমাণাদী
থেকে।এ ধরনের ইলম হল ইলমে ফিকহ।
কারো কারো
মতে, শরীয়াতের জ্ঞাত বিষয়াদী বিস্তারিত প্রামাণাদী থেকে আমলী শরীয়াআতের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়াকে ফিকহ বলা হয়।
আল্লামা ইবন
নুজায়ম এই
মতামতটির প্রতি সমর্থনভাব
পোষণ করে বলেছেন,আমলী
শরীয়াতের
অকাট্য
বিধি-বিধানের
যুথাযথ
অনুধাবন
হল
শরীয়াতের
পরিভাষায়
ইলমে
ফিকহ।
ইমাম আবূ
হানীফা(রঃ)
বলেন,--নাফস
ও
আত্মার
জন্য
যেসব
কাজ
কল্যাণকর
এবং
যে
সব
কাজ
কল্যাণকর
নয়
তা
সহ
নফস
সম্পর্কে
যথাযথ
অবহিত
হওয়াকে
ফিকহ
বলে।
সূফী সাধকদের
ভাষায়
ইলম
ও
আমলের
সমষ্টির নাম
হল ফিকহ।
এ কারণেরি হাসান
বসরী(রঃ) বলেন,
পরকালমুখী ইহকাল বিমুখ,স্বীয় দ্বীনের প্রতি সতর্ক দেওয়া,স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদতে সদা নিয়োজিত থাকা এবং মুসলিমগণের ইযযত ভুলুন্ঠিতকরণ থে বিরত ও সতর্কতা অবলম্বণকারী ব্যক্তি ফকীহ বলা হয়।
কেউ কেউ
বলে থাকেন যে,
ফিকাহশাস্ত্র সর্বপ্রথম আবূ
হানীফা(রঃ) কর্তৃক
উদ্ভাভিত এক নতুন
নীতি। পারতপক্ষে
এ কথা সামগ্রিকভাবে সত্য নয়।কারণ
তা আদম(আঃ)
এর সময় থেকে
উদ্ভাভিত হয়।প্রত্যেক নবী-রাসূলগণ
ফিকহের ধারক ও
বাহক ছিলেন।
তার পূর্ণতা ঘটে
আমাদের নবী মুহাম্মদ(সাঃ)
এর মধ্য দিয়ে। আল্লাহ
বলেন,
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। [মায়িদাঃ৩]
ইলমে ফিকহ-এর
আলোচ্য বিষয়ঃ- শরয়ী বিধান
প্রবর্তিত ব্যক্তির, কার্যকলাপ। অর্থাৎ
মানুষের জন্ম হতে
মৃত্যু এবং সমাহিত
হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত,
পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,আধ্যাত্নিক ইত্যাদি সার্বিক
কার্যকলাপ নিয়ে এতে
আলোচনা পর্যালোচনা করা
হয়। সুতরাং
মানুষের সার্বিক কর্ম-কান্ডই
এর আলোচ্য বিষয়।
ইলমে ফিকহ-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ- ইলমে ফিকহ
অধ্যয়নের লক্ষ্য হলো
নিজে আমল করা,
আল্লাহর বান্দাগণকে অজ্ঞতা
থেকে জ্ঞানের আলোর
দিকে আনয়ন করা এবং আমলে
অভ্যস্ত করা। উদ্দেশ্য হলো
শরীয়তের যাবতীয় আহকাম
সর্বসাধারণের কল্যানে প্রকাশ
করে, ইসলামী সমাজ
প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়া
ও আখিরাতের কল্যাণ
লাভের মাধ্যমে আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন করা।
ইলমে ফিকহ- এর হুকুমঃ- ইলমে ফিকহ
শিক্ষা করা ফরযে
আইন ও ফরযে
কিফায়া। যতটুকু
জ্ঞান অর্জন দ্বারা
ব্যক্তি জীবনে জরুরী
বিষয়াদির অবগতি লাভ
করা যায় ততটুকু
পরিমাণ জ্ঞানলাভ করা
প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর
জন্য ফরযে আইন। আর
এর অতিরিক্ত অন্যের
কল্যাণ সাধনকল্পে জ্ঞানলাভ
করা ফরযে কিফায়া। বাকী
ইলমে ফিকহের সার্বিক
বিষয়াদি নামায, রোযা,
যাকাত, হজ্জ, বিবাহ
তালাক প্রভৃতি বিষয়ে
অগাধ পান্ডিত্যার্জন করা
সুন্নাত বা মুস্তাহাব। আর
প্রত্যেকে যে যে
বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে
চায় তার জন্য
উক্ত বিষয়ে আবশ্যকীয়
মাসায়েল অবগত হওয়া
ওয়াজিব।
ইলমে ফিকহ-এর প্রয়োজনীয়তাঃ- ইলমে ফিকহের
আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুনিয়ার
সকল মানুষের জন্য
ইসলাম যেহেতু একমাত্র
পূর্ণাঙ্গ ও কল্যাণকর
জীবন-ব্যবস্থা, সেহেতু
কিয়ামত পর্যন্ত সমসাময়িক
যুগের পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে "ইজতিহাদের"
মাধ্যমে ইসলামী শরী'আতের
হুকুম আহকাম, আইন-কানুন
ও বিধি-নিষেধ
উদ্ভাবন, প্রবর্তন ও প্রতিষ্ঠা
করা শর'ঈ
প্রয়োজন। এর
মাধ্যমে পরিস্থিতির প্রয়োজন
পূরন করার জন্য
প্রদত্ত ব্যাখ্যাসমূহের মধ্য
থেকে একটিকে অগ্রাধিকার প্রদান করে
মানবতার জন্য প্রমাণিত
কল্যাণধর্মী বিধান হিসেবে
কার্যকর করা।
ইলমে
ফিকহ-এর উৎসঃ- রাসুল
(সঃ)-এর সময়ে
যে দু'টি
উৎস থেকে আইন
প্রণয়ন করা হয়েছে,
আইনের সে দু'টি
উৎস হলো-আল-কোরআন
ও
সুন্নাত। পরবর্তীতে
ইসলামী চিন্তাবিদ ও
নির্ভরযোগ্য মনীষীগন কর্তৃক
ইলমুল ফিকহ এর
উৎস হিসেবে আরো
দু'টি বিষয়কে
বিবেচনা করা হয়। তা
হলো- ৩. ইজমা বা হযরতের শিষ্যবর্গের মতামত ৪. কিয়াস বা পূর্ব অনুষ্ঠিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থিত সমস্যার সমাধান।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসসূমহকে মুসলিম আইনের প্রথম দুইটি উৎস হিসাবে সার্বজনীন ঐক্যমত থাকলেও ইজমা মুসলিম আইনের তৃতীয় উৎস হিসেবে সমধিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। এরপর কিয়াসকে মুসলিম আইনের চর্তুথ উৎস হিসাবে গন্য করা হয়। নিন্মে মুসলিম আইনের উৎসসমূহ গুলির একটি সংক্ষিপ্ত ব্যখ্যা দেওয়া হল।
ইসলামিক আইন বিজ্ঞানের উৎস প্রথমে আসে আল-কোরআন: কোরআন শব্দটি আরবী ‘কারা’ শব্দ হতে উদ্ভূত যার অর্থ পাঠ করা বা তেলাওয়াত করা, আভিধানিক অর্থে কোরআন হলো পাঠ, আবৃওি ইত্যাদি। আর ব্যবহারিক অর্থে কোরআন বলতে আমরা বুঝি, “যা মানবের নিকট মুতাওয়াতির উপায়ে পবিত্র মুছাফসের দুটি আবরণের মধ্যে অর্থাৎ খলিফা হযরত ওসমান (রাঃ) কর্তৃক সংকলিত ও সন্নিবেশিত আকারে প্রেরণ করা হয়েছে। এর প্রত্যেকটি শব্দই মহান আল্লাহ তায়ালার কর্তৃক প্রতক্ষ্যভাবে উচ্চারিত। ইসলামী আইনের সর্বপ্রধান উৎস হলো ঐশী বাণী সম্বলিত পবিত্র আল-কোরআন। মুসলিম আইনের এই পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ স্বর্গীয় দূত হযরত জিব্রাইল (আ:) এর মারফত ইহা স্বয়ং আল্লাহর নিকট হতে সরাসরিভাবে বিশ্বনবী হযরত মুহুম্মদ (সাঃ) এর নিকট অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআনকে ইসলামিক আইনের প্রাথমিক উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়। পবিএ কোরআনকে ৫৫ টি নাম দ্বারা পরিচিতি করা হয়েছে। যেমন: আল-কিতাব, আল-কোরআন, আল-মুবিন, আল-কালাম, আল-করিম, আল-নূর, আল-বুরহান, আল-কাইউম, আল-ছিরাতুল মুস্তাকিম, আল-হেবল, আল-মুছাদ্দিক, আল-মুহাইমিন, আল-হাকিম, আল-হিকমাহ, আল-রাহমাহ, আল-হুদা ইত্যাদি। পবিত্র কোরআনে সর্বমোট ৬০০০ আয়াতের মধ্যে ২০০টি আয়াতের মুসলিম আইনের সাধারণ নীতিমালা প্রকাশ রয়েছে। প্রায় ৮০ টি আয়াতে উওরাধিকার,বিবাহ,দেনমোহর,তালাক,ভরণ-পোষণ,হেবা (দান), এতিমের মাল রক্ষনাবেক্ষন ইত্যাদি সম্পর্কে বিধি-বিধান বর্ণিত রয়েছে। সুরা-বাকারা, আল নিসা, আল ইমরান, আল মাইদা, আল নূর, আল তালাক, আল বণি ইসরাইল ইত্যাতি সুরায় উপরোক্ত বিষয়সমূহ ব্যতীত জুয়া খেলা, নরহত্যা, বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কিত আইনও লিপিবদ্ধ আছে। যদিও কোরআনে আইনের বিধি হিসেবে অত্যল্প আয়াত নাজিল হয়েছে, তবুও উহা ইসলামী আইনের সর্বপ্রধান এবং মূল উৎস হিসাবে গ্রহন করা হয়, উহার উপর ভিওি করে আইন প্রনয়ণ ও সম্প্রসারণ করা হয়। কোরআনের অন্তর্ভুক্ত আইনের সম্পূর্ন তাৎপর্য উপলব্দি করার জন্য তফসীর, হাদিস ও সুন্নাহ্ র আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়।
ইসলামিক আইন বিজ্ঞানের উৎস হাদিস: কোরআনের মত হাদিস কেও ইসলামিক আইনের প্রাথমিক উৎস সমূহের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে গন্য করা হয়। গুরুত্র দিক থেকে বিচার করতে গেলে হাদিসের স্থান হল কোরআনের পরেই। এক কথায়, হাদিস হযরতের উক্তি, নির্দেশাবলী এবং তদনুষ্ঠিত জীবনের কার্যাবলীর মহাসংকলন। হাদিসের সংকলন কার্যে বহুসংখ্যক আইন বিশারদ আজীবন সাধনা করে গেছেন। হযরতের জীকদ্দশায় কখনও কখনও এরুপ অবস্থা হতো যে, বিচারের জন্য কোন প্রশ্ন উঃখাপিত হলো অথবা ব্যখ্যার নিমিওে কোন প্রশ্ন উপস্থাপিত করা হলো অথচ এর উপর কোন আয়াত নাজিল হয়নি, তখন এতদসংক্রান্ত বিষয়ে রসুলুল্লাহ ( সাঃ) যে মতামত ও সমাধান প্রনয়ন করতেন তা-ই হাদিস এবং উহাই আইনের নীতি হিসাবে গন্য হতো। কোরআনের আয়াতের ভাষা ও রায় ছিল স্বয়ং আল্লাহর কিন্তুু হযরতের এ ধারার মতামতের ভাষা তার নিজেস্ব হলেও এর রায় হতো আল্লাহ র ইঙ্গিতে। ইসলামিক আইন বিজ্ঞানের বিধান মোতাবেক যে সকল বিষয় সমূহ হাদিসের ক্ষেত্রে অপরিহার্য তা নিুরুপ
১. হযরত মুহুম্মদ (সাঃ) এর অভিমত, উক্তি, শিক্ষা, উপদেশ, অনুশাসন এবং বাণীর সংকলন বিষয়ক বক্তব্য।
২. হযরতের দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালী কর্মতৎপরতা এবং হযরত কর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলী বিষয় তৎপরতা।
৩. হযরতের পছন্দনীয় কার্যাবলী এবং অপছন্দনীয় কার্য সমূহের বিবরনমূলক বক্তব্য।
৪. হযরতের কর্তৃক তাঁর সাহাবীদের ক্ষেত্রে ইঙ্গিতবাহী সম্মতি বা নীরব সমর্থন।
অতএব , মুসলিম আইনে হাদিস বলতে ধর্ম এবং বিধান সম্পর্কিত বিষয়ে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন বক্ততাকে বুঝায়।
ইসলামি আইন ও অনুশাসনের ক্ষেত্রে, সুন্নাহ হলো হাদিসেরই সংশ্লিষ্ট রুপ অথাৎ সুন্নাহ হলো ঐ সকল হাদিস যে সকল বিষয়ে সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহ প্রদও কোন অহি নাজিল হয়নি। অতএব সুন্নাহ হলো আল্লাহর পয়গম্বরের কার্য, আদেশ বা নির্দেশ বা তার বাণীসমূহ, যা তার জীবদ্দশায় লিপিবদ্ধ করা হয়নি, তবে তা মুখে মুখে সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে এবং তা প্রাধিকার সম্পন্ন ব্যক্তিগন কর্তৃক তাঁর উম্মতদের নিকট পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে হাদিস ও সুন্নাহ একই অর্থে ব্যবহৃত হয় বটে, কিন্তু উহাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। হাদিস হযরতের জীবনের ঘটনাবলীর প্রতক্ষ্যদর্শী কাহিনী এবং সুন্নাহ তার ব্যবহারকে নির্দেশ করে। উক্ত মতামতের বিচারে বলা যায় যে , হযরতের আদর্শ চরিত্র যেখানে প্রত্যক্ষভাবে আইনের নীতির উৎস হিসেবে কার্য করে উহা সুন্নাহ তো বটেই, অধিকন্তু প্রত্যক্ষদর্শীর কাহিনী অথার্ৎ হাদিসের মধ্যেও তার আর্দশ চরিএ যেখানে অনুরুপ আইনগত প্রয়োগের অবকাশ প্রদান করে, উহাও সুন্নার সামিল। এভাবে বিভিন্ন মনীষী সুন্নাহ ও হাদিসকে ভিন্ন বলে প্রকাশ করলেও, আদিতে সুন্নাহ যে ভাবে সৃষ্ট হয়েছে উহাতে হাদিস ও সুন্নাহকে পৃথক করে দেখা কঠিন।
ইসলামিক আইন বিজ্ঞানের উৎস ইজমা : ইসলামিক জুরিসপ্রডেন্সের তৃতীয় উৎস হলো ইজমা। ইজমা বলতে হযরত এবং তার শিষ্যবর্গের মধ্যে মতামত সম্পর্কিত বিধানাবলী বুঝায়। এ ধরনের অভিমতগুলি জনসাধারণের সম্মতিগ্রাহ্য বলে উহাকে আইনের অন্তভূর্ক্ত করা হয়। ইজমা কোরআন ও হাদিসের অনুসিদ্ধান্ত রুপ হিসেবে গ্রহন করা হয় এবং উহাদের আইনগত শক্তিগুলি অবিসংবাদিত ঐক্যমত বলে পরিগনিত হয়। এক কথায় , আইনগত অধিকার এবং কোন দায়িত্ব পালনের প্রশ্নে হযরত এবং তার সাহাবীগণ কোন ঐক্যমতে পৌছে উপস্থিত সমস্যা সমাধানের উপযোগী যে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন, তা-ই মুসলিম আইনে ইজমা নামে অভিহিত হয়েছে। ইজমাকে ইসলামিক জুরিসপ্রডেন্সের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। মুসলিম আইনের উৎস হিসেবে ইজমার বৈধতা সম্পর্কে তেমন কোন বিতর্ক বা মতভেদের অবকাশ কোন সময়েই উত্থাপিত হয়নি। যে সকল সমস্যা সমাধানে স্বয়ং হযরত এবং তার সাহাবীগণ ঐক্যমত হয়েছেন, ইজমা ঘটনার সাদৃশ্যহেতু অনুরুপ সিদ্ধান্ত স্বীকার করে নেয়।
তত্ত্বগতভাবে অবশ্যই সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায় কখনো কোরআন ও সুন্নাহর বিপরীতে কোন প্রশ্নে ঐক্যমত হতে পারে না। কিন্তুু বাস্তবক্ষেত্রে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের প্রসারতার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানগণ বিভিন্ন রকম নূতন নূতন স্থানীয় আইন ও বিধিবিধানকে মেনে নিতে হয় এবং তখনই উক্ত বিধিবিধান শরীয়ার প্রশ্নে মেনে নেয়া বা না নেয়ার প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। মুসলিম আইনের এ ধরনের বির্বতনের ক্ষেত্রে মুসলিম ওলেমাগণের ঐক্যমত বা ইজমা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং দ্বিধাসন্ধিগ্ধ আইন সমূহ গ্রহন ও বর্জনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন পূর্বক ইসলামী আইন প্রনয়নে সাহায্য করে। প্রকৃত অর্থে ওলেমাগণের ঐক্যমতই হলো ইজমা এবং উহা অভ্রান্ত হিসেবে গ্রহন করা হয়।
ইজমা:মূলত নবী করিম(সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত এক বাণীই ইজমার ভিওি তাহলো, “ আমার উম্মতগণ কখনও কোন ভ্রান্ত মতবাদের উপর একমত হবে না”। ব্যাপক অর্থে ইজমা বলতে সার্বজনীনভাবে মুসলমানদের স্বীকৃত শরীয়া আইনের মূলনীতি সমূহকেও বুঝানো হয়। যেমন : ইসলামে মূল গঠনতান্ত্রিক আইন সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের কোথাও বর্ণিত নেই, কিন্তুু খলিফা নির্বাচন প্রশ্নে মুসলমান আলেমগণ ঐক্যমত পোষণের মাধ্যমে ইজমা প্রতিষ্ঠার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। ইজমা মূলত: ধর্ম এবং নৈতিকতাসম্পন্ন বিধান মাএ। যদি কোন ব্যক্তি ইজমা প্রবর্তিত বিধানাবলী অস্বীকার বা অমান্য করে, তাহলে তার অপরাধ ইনফিডেলিটি বা কুফরি তুল্য বলে গণ্য হবে। এ সকল কারণে ইজমা অর্থাৎ মুসলিম আইন বিশারদগণের ঐক্যমতকে ইসলামিক জুরি¯প্র“ডেন্সের আওতায় অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
ইজমা গঠনের শর্তাবলী : বৈধ ইজমা সংগঠনের ক্ষেত্রে নিুলিখিত শর্তাবলীর অস্তিত্ব থাকতে হবে ঃ
১। ইজমা সংগঠনের ক্ষেত্রে মুসলিম আইন বিশারদগণকে ঐক্যমতে পৌছতে হবে। ইজমা গঠনের ক্ষেত্রে যদি কোন মত বিরোধের উদ্ভব ঘটে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীগণ যদি মুসলিম আইনের বিধান মোতাবেক অযোগ্য বলে গণ্য হয় তাহলে উপস্থিত ওলেমাদের সংখ্যাধিক্যের অভিমতি বৈধ ইজমা সম্পাদনের ক্ষেত্রে সমর্থন লাভ করতে পারে।
২। কোন এক বিষয়ে ঐক্য মত স্থাপিত হলে ইহা পুনরায় আলোচিত বা রদ হবে না।
৩। মুসলিম জুরি¯প্র“ডেন্সের বিধান মোতাবেক, হানাফি মালিকী এবং সাফেয়ী মাহযাব অনুসারে উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ট দলের সদস্যদের মতামতই বৈধ ইজমা সংগঠনের জন্য যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতো। অপরদিকে হাম্বালি মাজাবের ব্যাপার ছিল অত্যন্ত রক্ষণশীল প্রকৃতির। সেখানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট ইজমা প্রণয়নের আবশ্যক বলে গৃহীত হতো।
৪। একটি ইজমা পরবর্তী কোন সুবিবেচিত ইজমা দ্বারা বাতিল হতে পারে।
৫। কোন যুগের মুসলিম বিজ্ঞানীগণ বিশেষ প্রশ্নে দুই রকমের ইজমা প্রতিষ্ঠিত করলে এরপর তৃতীয় মত গ্রহণযোগ্য নয়।
ইজমার শ্রেণীবিভাগ ঃ ইজমা তিন রকমের। যথা ঃ
১। রসূলুল্লার সাহাবী গণের ইজমা, ২। মুজতাহিদগণের ইজমা, ৩। জনগণের ইজমা
১। রসূলুল্লার সাহাবীগণের ইজমা ঃ সাহাবীগণের ইজমা সর্বসম্মতিক্রমে বৈধ বলে গ্রহণ করা হয়। এই ইজমা আইনবিজ্ঞানীদের ইজমা অপেক্ষা উচ্চতর বলে স্বীকৃত। কারণ পবিত্র কুরানে এই সকল মতামতকে আল্লার রহমত হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সাহাবীগণের ইজমা যেহেতু চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হয়, তাই পরবর্তীকালে কোন ইজমা দ্বারা এইগুলি প্রতিস্থাপিত বা পরিবর্তীত হতে পারে না। মুসলমানদের মাঝে কতিপয় সম্প্রদায় আছেন। যেমন ঃ জাহিরী সম্প্রদায়, তারা সাহাবীগণের ইজমা ব্যতীত অন্য কোন ইজমা স্বীকার করেন না।
২। মুজতাহিদগণের ইজমা ঃ প্রথমত ওলেমাগণ কর্তৃক আইন বিষয়ক ইজমা প্রতিষ্ঠিত হতো। যেহেতু তারা প্রধানতঃ আইনবিদ ছিলেন না, ধর্মীয় বিষয়ে এবং নীতিশাস্ত্রে সুপন্ডিত ছিলেন মাত্র, সেই কারণে ফিকাহ্ শাস্ত্রে সুপন্ডিত বা ফকিহ্গণ কর্তৃক ইজমা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ইজতিহাদের মাধ্যমে তাদের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় বিধায় তারা মুজতাহিদ নামে সুপরিচিত। এই মুজতাহিদদের সম্মিলিত মত ও সিদ্ধান্তকে ইসলামী আইনের উৎস হিসেবে মুল্য দেয়া হয়।
৩। জনগণের ইজমা ঃ জনগণের ইজমা ধর্মীয় অনুশাসনের উপর ভিত্তিশীল। যেমন ঃ নামাজ, রোজা, ইত্যকার ব্যপারে জনগণের সম্মিলিত মত দ্বারা বিধি প্রণয়ন করা হয়। ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও রাজনৈতিক এমনকি আইন সংক্রান্ত বিষয়সমূহ জনগণের মতামত দ্বারাই নির্ধারিত হতো। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মৃত্যুর পর হযরত আবু বকরকে খলিফা নিযুক্তির প্রশ্নে জনগণের ইজমা প্রযুক্ত হয়। এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। বিশেষ ভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের বহু বিষয় জনগণের ইজমা দ্বারা প্রণীত হয়। উল্লেখ্য যে, ধর্মীয় অনুশাসনের ক্ষেত্রে জনগণের ইজমা অনেক ক্ষেত্রে স্বীকৃত হয়নি। উক্ত ক্ষেত্রগুলিতে যারা বিশেষভাবে শরীয়তের জ্ঞানে সুপন্ডিত ছিলেন তাদের ইজমাই গৃহীত হয়েছে।
ইসলামিক আইন বিজ্ঞানের উৎস কিয়াস: কিয়াসের আক্ষরিক অর্থ হল পরিমাপ, সমর্থন প্রদান, এবং সমতা। কিন্তু আইনের উৎস হিসেবে হানাফি আইনবিদগণ উহার যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তাহলো, ‘‘মূল প্রাধিকার স্বরূপ যেসব আইনের বিধি কিংবা অনুবাদের উপর নির্ভর করে নব উদ্ভুত কোন বিষয়ের বিচার করা সুকঠিন হয়ে পড়ে, তখন উক্ত প্রতিষ্ঠিত বিধিগুলি হতে সদৃশ্য অনুসন্ধান করে ফলপ্রসূ যুক্তি অর্থাৎ ইল্লাত দ্বারা আইনকে সম্প্রসারণ করে, সেই বিশেষ ক্ষেত্র গুলিতে প্রয়োগযোগ্য করার পদ্ধতিকে কিয়াস বলে’’। অর্থাৎ ‘‘কিয়াস হলো ইল্লাত বা ফলপ্রসূ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোরান ও হাদিসের আইনের সম্প্রসারণ এবং বিশেষ ক্ষেত্রে উহা প্রয়োগ’’। কিয়াসের মাধ্যম হলো ধী-শক্তি এবং বিচার বুদ্ধির ব্যবহার, যদিও এটা ব্যক্তিগত রায় কিংবা অভিমতের অনুরূপ। কিন্তু এ রায় যখন কোরআন কিংবা হাদিসের অনুজ্ঞার উপর ভিত্তিমান হয় তখনই একে কিয়াস বলে। এ প্রকার বুদ্ধির ব্যবহার কোরআন ও হাদীস কর্তৃক সমর্থিত। কিয়াস ইসলামিক জুরি¯প্র“ডেন্সের চতুর্থ উৎস। সহজভাবে এর অর্থ কোন বস্তুর সঙ্গে তুলনা করে কিংবা অন্য বিষয়ের সঙ্গে তুলনামূলক পর্যালোচনা দ্বারা কোন সদৃশ্য বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সদৃশ্য ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কিয়াস একটি বিশেষ উপাদান। কোরআন হাদীস এবং ইজমা এই তিনটি উৎসের বিধান অনুসারে উপস্থিত বিষয়টি পর্যালোচনা করে সে সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণই হলো কিয়াসের মুখ্য উদ্দেশ্য। এটা একটা তুলনামূলক পদ্ধতি এবং অবরোহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনের সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। মুসলিম আইনের চারটি মাযহাবই কিয়াসকে আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ইসলামে মাদকতা সৃষ্টিকারী তীব্র পানীয়কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মদকে স্পষ্টভাবে ও নির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ করার বিধান না থাকলেও মদ মাদকতা ও উন্মত্ততা সৃষ্টিকারী তীব্র পানীয় বিধায় সদৃশ্যমূলক অবরোহন প্রক্রিয়ায় একে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা কিয়াসেরই ফলশ্র“তি।
কিয়াসের প্রকারভেদ ঃ কিয়াস দুই প্রকার। যথা ঃ ১। কিয়াস-ই-জলি বা সুষ্পষ্ট কিয়াস ২। কিয়াস-ই-খাফ্ই বা সুপ্ত কিয়াস।
Notes is Collect from https://www.facebook.com/akla.pathik11
পবিত্র কোরআন ও হাদিসসূমহকে মুসলিম আইনের প্রথম দুইটি উৎস হিসাবে সার্বজনীন ঐক্যমত থাকলেও ইজমা মুসলিম আইনের তৃতীয় উৎস হিসেবে সমধিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। এরপর কিয়াসকে মুসলিম আইনের চর্তুথ উৎস হিসাবে গন্য করা হয়। নিন্মে মুসলিম আইনের উৎসসমূহ গুলির একটি সংক্ষিপ্ত ব্যখ্যা দেওয়া হল।
ইসলামিক আইন বিজ্ঞানের উৎস প্রথমে আসে আল-কোরআন: কোরআন শব্দটি আরবী ‘কারা’ শব্দ হতে উদ্ভূত যার অর্থ পাঠ করা বা তেলাওয়াত করা, আভিধানিক অর্থে কোরআন হলো পাঠ, আবৃওি ইত্যাদি। আর ব্যবহারিক অর্থে কোরআন বলতে আমরা বুঝি, “যা মানবের নিকট মুতাওয়াতির উপায়ে পবিত্র মুছাফসের দুটি আবরণের মধ্যে অর্থাৎ খলিফা হযরত ওসমান (রাঃ) কর্তৃক সংকলিত ও সন্নিবেশিত আকারে প্রেরণ করা হয়েছে। এর প্রত্যেকটি শব্দই মহান আল্লাহ তায়ালার কর্তৃক প্রতক্ষ্যভাবে উচ্চারিত। ইসলামী আইনের সর্বপ্রধান উৎস হলো ঐশী বাণী সম্বলিত পবিত্র আল-কোরআন। মুসলিম আইনের এই পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ স্বর্গীয় দূত হযরত জিব্রাইল (আ:) এর মারফত ইহা স্বয়ং আল্লাহর নিকট হতে সরাসরিভাবে বিশ্বনবী হযরত মুহুম্মদ (সাঃ) এর নিকট অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআনকে ইসলামিক আইনের প্রাথমিক উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়। পবিএ কোরআনকে ৫৫ টি নাম দ্বারা পরিচিতি করা হয়েছে। যেমন: আল-কিতাব, আল-কোরআন, আল-মুবিন, আল-কালাম, আল-করিম, আল-নূর, আল-বুরহান, আল-কাইউম, আল-ছিরাতুল মুস্তাকিম, আল-হেবল, আল-মুছাদ্দিক, আল-মুহাইমিন, আল-হাকিম, আল-হিকমাহ, আল-রাহমাহ, আল-হুদা ইত্যাদি। পবিত্র কোরআনে সর্বমোট ৬০০০ আয়াতের মধ্যে ২০০টি আয়াতের মুসলিম আইনের সাধারণ নীতিমালা প্রকাশ রয়েছে। প্রায় ৮০ টি আয়াতে উওরাধিকার,বিবাহ,দেনমোহর,তালাক,ভরণ-পোষণ,হেবা (দান), এতিমের মাল রক্ষনাবেক্ষন ইত্যাদি সম্পর্কে বিধি-বিধান বর্ণিত রয়েছে। সুরা-বাকারা, আল নিসা, আল ইমরান, আল মাইদা, আল নূর, আল তালাক, আল বণি ইসরাইল ইত্যাতি সুরায় উপরোক্ত বিষয়সমূহ ব্যতীত জুয়া খেলা, নরহত্যা, বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কিত আইনও লিপিবদ্ধ আছে। যদিও কোরআনে আইনের বিধি হিসেবে অত্যল্প আয়াত নাজিল হয়েছে, তবুও উহা ইসলামী আইনের সর্বপ্রধান এবং মূল উৎস হিসাবে গ্রহন করা হয়, উহার উপর ভিওি করে আইন প্রনয়ণ ও সম্প্রসারণ করা হয়। কোরআনের অন্তর্ভুক্ত আইনের সম্পূর্ন তাৎপর্য উপলব্দি করার জন্য তফসীর, হাদিস ও সুন্নাহ্ র আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়।
ইসলামিক আইন বিজ্ঞানের উৎস হাদিস: কোরআনের মত হাদিস কেও ইসলামিক আইনের প্রাথমিক উৎস সমূহের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে গন্য করা হয়। গুরুত্র দিক থেকে বিচার করতে গেলে হাদিসের স্থান হল কোরআনের পরেই। এক কথায়, হাদিস হযরতের উক্তি, নির্দেশাবলী এবং তদনুষ্ঠিত জীবনের কার্যাবলীর মহাসংকলন। হাদিসের সংকলন কার্যে বহুসংখ্যক আইন বিশারদ আজীবন সাধনা করে গেছেন। হযরতের জীকদ্দশায় কখনও কখনও এরুপ অবস্থা হতো যে, বিচারের জন্য কোন প্রশ্ন উঃখাপিত হলো অথবা ব্যখ্যার নিমিওে কোন প্রশ্ন উপস্থাপিত করা হলো অথচ এর উপর কোন আয়াত নাজিল হয়নি, তখন এতদসংক্রান্ত বিষয়ে রসুলুল্লাহ ( সাঃ) যে মতামত ও সমাধান প্রনয়ন করতেন তা-ই হাদিস এবং উহাই আইনের নীতি হিসাবে গন্য হতো। কোরআনের আয়াতের ভাষা ও রায় ছিল স্বয়ং আল্লাহর কিন্তুু হযরতের এ ধারার মতামতের ভাষা তার নিজেস্ব হলেও এর রায় হতো আল্লাহ র ইঙ্গিতে। ইসলামিক আইন বিজ্ঞানের বিধান মোতাবেক যে সকল বিষয় সমূহ হাদিসের ক্ষেত্রে অপরিহার্য তা নিুরুপ
১. হযরত মুহুম্মদ (সাঃ) এর অভিমত, উক্তি, শিক্ষা, উপদেশ, অনুশাসন এবং বাণীর সংকলন বিষয়ক বক্তব্য।
২. হযরতের দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালী কর্মতৎপরতা এবং হযরত কর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলী বিষয় তৎপরতা।
৩. হযরতের পছন্দনীয় কার্যাবলী এবং অপছন্দনীয় কার্য সমূহের বিবরনমূলক বক্তব্য।
৪. হযরতের কর্তৃক তাঁর সাহাবীদের ক্ষেত্রে ইঙ্গিতবাহী সম্মতি বা নীরব সমর্থন।
অতএব , মুসলিম আইনে হাদিস বলতে ধর্ম এবং বিধান সম্পর্কিত বিষয়ে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন বক্ততাকে বুঝায়।
ইসলামি আইন ও অনুশাসনের ক্ষেত্রে, সুন্নাহ হলো হাদিসেরই সংশ্লিষ্ট রুপ অথাৎ সুন্নাহ হলো ঐ সকল হাদিস যে সকল বিষয়ে সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহ প্রদও কোন অহি নাজিল হয়নি। অতএব সুন্নাহ হলো আল্লাহর পয়গম্বরের কার্য, আদেশ বা নির্দেশ বা তার বাণীসমূহ, যা তার জীবদ্দশায় লিপিবদ্ধ করা হয়নি, তবে তা মুখে মুখে সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে এবং তা প্রাধিকার সম্পন্ন ব্যক্তিগন কর্তৃক তাঁর উম্মতদের নিকট পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে হাদিস ও সুন্নাহ একই অর্থে ব্যবহৃত হয় বটে, কিন্তু উহাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। হাদিস হযরতের জীবনের ঘটনাবলীর প্রতক্ষ্যদর্শী কাহিনী এবং সুন্নাহ তার ব্যবহারকে নির্দেশ করে। উক্ত মতামতের বিচারে বলা যায় যে , হযরতের আদর্শ চরিত্র যেখানে প্রত্যক্ষভাবে আইনের নীতির উৎস হিসেবে কার্য করে উহা সুন্নাহ তো বটেই, অধিকন্তু প্রত্যক্ষদর্শীর কাহিনী অথার্ৎ হাদিসের মধ্যেও তার আর্দশ চরিএ যেখানে অনুরুপ আইনগত প্রয়োগের অবকাশ প্রদান করে, উহাও সুন্নার সামিল। এভাবে বিভিন্ন মনীষী সুন্নাহ ও হাদিসকে ভিন্ন বলে প্রকাশ করলেও, আদিতে সুন্নাহ যে ভাবে সৃষ্ট হয়েছে উহাতে হাদিস ও সুন্নাহকে পৃথক করে দেখা কঠিন।
ইসলামিক আইন বিজ্ঞানের উৎস ইজমা : ইসলামিক জুরিসপ্রডেন্সের তৃতীয় উৎস হলো ইজমা। ইজমা বলতে হযরত এবং তার শিষ্যবর্গের মধ্যে মতামত সম্পর্কিত বিধানাবলী বুঝায়। এ ধরনের অভিমতগুলি জনসাধারণের সম্মতিগ্রাহ্য বলে উহাকে আইনের অন্তভূর্ক্ত করা হয়। ইজমা কোরআন ও হাদিসের অনুসিদ্ধান্ত রুপ হিসেবে গ্রহন করা হয় এবং উহাদের আইনগত শক্তিগুলি অবিসংবাদিত ঐক্যমত বলে পরিগনিত হয়। এক কথায় , আইনগত অধিকার এবং কোন দায়িত্ব পালনের প্রশ্নে হযরত এবং তার সাহাবীগণ কোন ঐক্যমতে পৌছে উপস্থিত সমস্যা সমাধানের উপযোগী যে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন, তা-ই মুসলিম আইনে ইজমা নামে অভিহিত হয়েছে। ইজমাকে ইসলামিক জুরিসপ্রডেন্সের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। মুসলিম আইনের উৎস হিসেবে ইজমার বৈধতা সম্পর্কে তেমন কোন বিতর্ক বা মতভেদের অবকাশ কোন সময়েই উত্থাপিত হয়নি। যে সকল সমস্যা সমাধানে স্বয়ং হযরত এবং তার সাহাবীগণ ঐক্যমত হয়েছেন, ইজমা ঘটনার সাদৃশ্যহেতু অনুরুপ সিদ্ধান্ত স্বীকার করে নেয়।
তত্ত্বগতভাবে অবশ্যই সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায় কখনো কোরআন ও সুন্নাহর বিপরীতে কোন প্রশ্নে ঐক্যমত হতে পারে না। কিন্তুু বাস্তবক্ষেত্রে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের প্রসারতার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানগণ বিভিন্ন রকম নূতন নূতন স্থানীয় আইন ও বিধিবিধানকে মেনে নিতে হয় এবং তখনই উক্ত বিধিবিধান শরীয়ার প্রশ্নে মেনে নেয়া বা না নেয়ার প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। মুসলিম আইনের এ ধরনের বির্বতনের ক্ষেত্রে মুসলিম ওলেমাগণের ঐক্যমত বা ইজমা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং দ্বিধাসন্ধিগ্ধ আইন সমূহ গ্রহন ও বর্জনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন পূর্বক ইসলামী আইন প্রনয়নে সাহায্য করে। প্রকৃত অর্থে ওলেমাগণের ঐক্যমতই হলো ইজমা এবং উহা অভ্রান্ত হিসেবে গ্রহন করা হয়।
ইজমা:মূলত নবী করিম(সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত এক বাণীই ইজমার ভিওি তাহলো, “ আমার উম্মতগণ কখনও কোন ভ্রান্ত মতবাদের উপর একমত হবে না”। ব্যাপক অর্থে ইজমা বলতে সার্বজনীনভাবে মুসলমানদের স্বীকৃত শরীয়া আইনের মূলনীতি সমূহকেও বুঝানো হয়। যেমন : ইসলামে মূল গঠনতান্ত্রিক আইন সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের কোথাও বর্ণিত নেই, কিন্তুু খলিফা নির্বাচন প্রশ্নে মুসলমান আলেমগণ ঐক্যমত পোষণের মাধ্যমে ইজমা প্রতিষ্ঠার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। ইজমা মূলত: ধর্ম এবং নৈতিকতাসম্পন্ন বিধান মাএ। যদি কোন ব্যক্তি ইজমা প্রবর্তিত বিধানাবলী অস্বীকার বা অমান্য করে, তাহলে তার অপরাধ ইনফিডেলিটি বা কুফরি তুল্য বলে গণ্য হবে। এ সকল কারণে ইজমা অর্থাৎ মুসলিম আইন বিশারদগণের ঐক্যমতকে ইসলামিক জুরি¯প্র“ডেন্সের আওতায় অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
ইজমা গঠনের শর্তাবলী : বৈধ ইজমা সংগঠনের ক্ষেত্রে নিুলিখিত শর্তাবলীর অস্তিত্ব থাকতে হবে ঃ
১। ইজমা সংগঠনের ক্ষেত্রে মুসলিম আইন বিশারদগণকে ঐক্যমতে পৌছতে হবে। ইজমা গঠনের ক্ষেত্রে যদি কোন মত বিরোধের উদ্ভব ঘটে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীগণ যদি মুসলিম আইনের বিধান মোতাবেক অযোগ্য বলে গণ্য হয় তাহলে উপস্থিত ওলেমাদের সংখ্যাধিক্যের অভিমতি বৈধ ইজমা সম্পাদনের ক্ষেত্রে সমর্থন লাভ করতে পারে।
২। কোন এক বিষয়ে ঐক্য মত স্থাপিত হলে ইহা পুনরায় আলোচিত বা রদ হবে না।
৩। মুসলিম জুরি¯প্র“ডেন্সের বিধান মোতাবেক, হানাফি মালিকী এবং সাফেয়ী মাহযাব অনুসারে উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ট দলের সদস্যদের মতামতই বৈধ ইজমা সংগঠনের জন্য যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতো। অপরদিকে হাম্বালি মাজাবের ব্যাপার ছিল অত্যন্ত রক্ষণশীল প্রকৃতির। সেখানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট ইজমা প্রণয়নের আবশ্যক বলে গৃহীত হতো।
৪। একটি ইজমা পরবর্তী কোন সুবিবেচিত ইজমা দ্বারা বাতিল হতে পারে।
৫। কোন যুগের মুসলিম বিজ্ঞানীগণ বিশেষ প্রশ্নে দুই রকমের ইজমা প্রতিষ্ঠিত করলে এরপর তৃতীয় মত গ্রহণযোগ্য নয়।
ইজমার শ্রেণীবিভাগ ঃ ইজমা তিন রকমের। যথা ঃ
১। রসূলুল্লার সাহাবী গণের ইজমা, ২। মুজতাহিদগণের ইজমা, ৩। জনগণের ইজমা
১। রসূলুল্লার সাহাবীগণের ইজমা ঃ সাহাবীগণের ইজমা সর্বসম্মতিক্রমে বৈধ বলে গ্রহণ করা হয়। এই ইজমা আইনবিজ্ঞানীদের ইজমা অপেক্ষা উচ্চতর বলে স্বীকৃত। কারণ পবিত্র কুরানে এই সকল মতামতকে আল্লার রহমত হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সাহাবীগণের ইজমা যেহেতু চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হয়, তাই পরবর্তীকালে কোন ইজমা দ্বারা এইগুলি প্রতিস্থাপিত বা পরিবর্তীত হতে পারে না। মুসলমানদের মাঝে কতিপয় সম্প্রদায় আছেন। যেমন ঃ জাহিরী সম্প্রদায়, তারা সাহাবীগণের ইজমা ব্যতীত অন্য কোন ইজমা স্বীকার করেন না।
২। মুজতাহিদগণের ইজমা ঃ প্রথমত ওলেমাগণ কর্তৃক আইন বিষয়ক ইজমা প্রতিষ্ঠিত হতো। যেহেতু তারা প্রধানতঃ আইনবিদ ছিলেন না, ধর্মীয় বিষয়ে এবং নীতিশাস্ত্রে সুপন্ডিত ছিলেন মাত্র, সেই কারণে ফিকাহ্ শাস্ত্রে সুপন্ডিত বা ফকিহ্গণ কর্তৃক ইজমা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ইজতিহাদের মাধ্যমে তাদের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় বিধায় তারা মুজতাহিদ নামে সুপরিচিত। এই মুজতাহিদদের সম্মিলিত মত ও সিদ্ধান্তকে ইসলামী আইনের উৎস হিসেবে মুল্য দেয়া হয়।
৩। জনগণের ইজমা ঃ জনগণের ইজমা ধর্মীয় অনুশাসনের উপর ভিত্তিশীল। যেমন ঃ নামাজ, রোজা, ইত্যকার ব্যপারে জনগণের সম্মিলিত মত দ্বারা বিধি প্রণয়ন করা হয়। ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও রাজনৈতিক এমনকি আইন সংক্রান্ত বিষয়সমূহ জনগণের মতামত দ্বারাই নির্ধারিত হতো। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মৃত্যুর পর হযরত আবু বকরকে খলিফা নিযুক্তির প্রশ্নে জনগণের ইজমা প্রযুক্ত হয়। এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। বিশেষ ভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের বহু বিষয় জনগণের ইজমা দ্বারা প্রণীত হয়। উল্লেখ্য যে, ধর্মীয় অনুশাসনের ক্ষেত্রে জনগণের ইজমা অনেক ক্ষেত্রে স্বীকৃত হয়নি। উক্ত ক্ষেত্রগুলিতে যারা বিশেষভাবে শরীয়তের জ্ঞানে সুপন্ডিত ছিলেন তাদের ইজমাই গৃহীত হয়েছে।
ইসলামিক আইন বিজ্ঞানের উৎস কিয়াস: কিয়াসের আক্ষরিক অর্থ হল পরিমাপ, সমর্থন প্রদান, এবং সমতা। কিন্তু আইনের উৎস হিসেবে হানাফি আইনবিদগণ উহার যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তাহলো, ‘‘মূল প্রাধিকার স্বরূপ যেসব আইনের বিধি কিংবা অনুবাদের উপর নির্ভর করে নব উদ্ভুত কোন বিষয়ের বিচার করা সুকঠিন হয়ে পড়ে, তখন উক্ত প্রতিষ্ঠিত বিধিগুলি হতে সদৃশ্য অনুসন্ধান করে ফলপ্রসূ যুক্তি অর্থাৎ ইল্লাত দ্বারা আইনকে সম্প্রসারণ করে, সেই বিশেষ ক্ষেত্র গুলিতে প্রয়োগযোগ্য করার পদ্ধতিকে কিয়াস বলে’’। অর্থাৎ ‘‘কিয়াস হলো ইল্লাত বা ফলপ্রসূ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোরান ও হাদিসের আইনের সম্প্রসারণ এবং বিশেষ ক্ষেত্রে উহা প্রয়োগ’’। কিয়াসের মাধ্যম হলো ধী-শক্তি এবং বিচার বুদ্ধির ব্যবহার, যদিও এটা ব্যক্তিগত রায় কিংবা অভিমতের অনুরূপ। কিন্তু এ রায় যখন কোরআন কিংবা হাদিসের অনুজ্ঞার উপর ভিত্তিমান হয় তখনই একে কিয়াস বলে। এ প্রকার বুদ্ধির ব্যবহার কোরআন ও হাদীস কর্তৃক সমর্থিত। কিয়াস ইসলামিক জুরি¯প্র“ডেন্সের চতুর্থ উৎস। সহজভাবে এর অর্থ কোন বস্তুর সঙ্গে তুলনা করে কিংবা অন্য বিষয়ের সঙ্গে তুলনামূলক পর্যালোচনা দ্বারা কোন সদৃশ্য বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সদৃশ্য ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কিয়াস একটি বিশেষ উপাদান। কোরআন হাদীস এবং ইজমা এই তিনটি উৎসের বিধান অনুসারে উপস্থিত বিষয়টি পর্যালোচনা করে সে সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণই হলো কিয়াসের মুখ্য উদ্দেশ্য। এটা একটা তুলনামূলক পদ্ধতি এবং অবরোহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনের সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। মুসলিম আইনের চারটি মাযহাবই কিয়াসকে আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ইসলামে মাদকতা সৃষ্টিকারী তীব্র পানীয়কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মদকে স্পষ্টভাবে ও নির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ করার বিধান না থাকলেও মদ মাদকতা ও উন্মত্ততা সৃষ্টিকারী তীব্র পানীয় বিধায় সদৃশ্যমূলক অবরোহন প্রক্রিয়ায় একে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা কিয়াসেরই ফলশ্র“তি।
কিয়াসের প্রকারভেদ ঃ কিয়াস দুই প্রকার। যথা ঃ ১। কিয়াস-ই-জলি বা সুষ্পষ্ট কিয়াস ২। কিয়াস-ই-খাফ্ই বা সুপ্ত কিয়াস।
Notes is Collect from
No comments:
Post a Comment
thank you